রোজা ভঙ্গের কারণ এবং রোজা ভেঙে গেলে কী করতে হবে?

রোজা ইসলাম ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা প্রত্যেক মুসলিমের উপর রমজান মাসে ফরজ। রোজা রাখা বা সিয়াম পালন একদিকে যেমন আত্মিক উন্নতির জন্য জরুরি, তেমনি শরীরের জন্যও বিশেষ উপকারী। তবে, অনেক সময় মানুষ না বুঝে বা অজ্ঞতার কারণে রোজা ভেঙে ফেলতে পারে। রোজা ভাঙা মুসলিমদের জন্য একটি বড় দোষ হিসেবে গণ্য হয়, তাই রোজা ভাঙার কারণগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্লগ পোস্টে আমরা রোজা ভঙ্গের কারণ, তার পরিণতি এবং রোজা ভঙ্গের পর কীভাবে তওবা করা উচিত তা বিস্তারিত আলোচনা করব।

রোজা ভঙ্গের কারণ

রোজা ভঙ্গের কারণ সাধারণত শারীরিক এবং মানসিক নানা পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। নিচে কিছু সাধারণ রোজা ভাঙার কারণ তুলে ধরা হল:

  1. খাওয়া বা পান করা
    এটি সবচেয়ে সাধারণ রোজা ভঙ্গের কারণ। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন, তবে রোজা ভেঙে যাবে। এই অবস্থায় রোজার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তাকে কাফফারা দিতে হবে।
  2. জানাযায়
    যদি কেউ সহবাস (শারীরিক সম্পর্ক) করে, তবে তার রোজা ভেঙে যায়। এটি রোজার পরিপন্থী এবং মুসলিমরা রোজা রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে এ থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করে।
  3. বমি করা
    রোজার মধ্যে যদি কেউ জানবুঝে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে। তবে, যদি কেউ অজান্তে বমি করেন, তবে রোজা ঠিক থাকে।
  4. মেনস্ট্রুয়েশন বা শারীরিক অস্বস্তি
    মহিলাদের জন্য মেনস্ট্রুয়েশন বা ইকতিবেস (বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময়) অবস্থায় রোজা ভেঙে যায়। এটা প্রাকৃতিক অবস্থায় ঘটে, কিন্তু তাতে রোজা ভেঙে যেতে পারে।
  5. গর্ভবতী হওয়া
    গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শারীরিক ক্লান্তি বা অসুস্থতার কারণে রোজা ভেঙে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের উপর রোজা রাখা ফরজ না।
  6. অজ্ঞান হওয়া বা মৃত্যু
    যদি কেউ রোজার মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যান অথবা মৃত্যু ঘটান, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।

রোজা ভঙ্গের আরও কিছু কারণ

ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা
এটি রোজা ভাঙার সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রচলিত কারণ। যদি কেউ জানবুঝে রোজার মধ্যে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন, তাহলে তাদের রোজা ভেঙে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার বা রাতের খাবারের মধ্যে কোনো কিছু খেলে রোজা ভেঙে যাবে। এখানে, উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ — যদি কেউ ভুলবশত খাবার খায়, তবে তার রোজা ঠিক থাকবে, তবে সে অবশ্যই তওবা করবে।

শারীরিক সম্পর্ক (সহবাস)
যদি কেউ রোজার মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর, ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী, কাফফারা (অর্থাৎ, দান করা বা এক মাসের রোজা রাখা) দিতে হবে।

গর্ভধারণ বা স্তন্যপান
গর্ভবতী মহিলাদের বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে যদি শরীর খুবই দুর্বল হয়ে যায় বা তাদের শারীরিক অবস্থার কারণে রোজা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, তবে তাদের জন্য রোজা না রাখার সুযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাদেরকে কাফফারা দিতে হতে পারে। তবে, এটি মুসলিম উম্মাহর স্বাস্থ্যগত তাগিদ অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়।

মেনস্ট্রুয়েশন (মাসিক বা হায়েজ)
মহিলাদের মেনস্ট্রুয়েশন বা মাসিক চলাকালীন রোজা রাখা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ। যদি কেউ মেনস্ট্রুয়েশন চলাকালে রোজা রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে তা ভেঙে যাবে। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের কেবল রোজা ছুটে যাবে এবং পরে তা পূর্ণ করতে হবে।

অজান্তে বমি করা
যদি কেউ রোজা রাখার সময় অজান্তে বমি করে ফেলেন, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে না। তবে, যদি তা ইচ্ছাকৃতভাবে বা জানবুঝে করা হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং তাকে কাফফারা দিতে হবে।

অবৈধ ও নৈতিক অঙ্গীকারের শপথ করা
এটি একটি সাধারণ রোজা ভাঙার কারণ নয়, তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি কেউ কোনো নৈতিকভাবে খারাপ কাজ করতে বা মিথ্যা শপথ করতে প্রস্তুত হন, তবে তার রোজা অসম্পূর্ণ হতে পারে। এমন কাজ যেগুলো রোজা এবং নৈতিকতার মধ্যে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, সেগুলো রোজার উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন করে।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা (অস্থায়ী অবস্থায়)
যদি কোনো ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এবং সেখান থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে তার রোজা ভেঙে যেতে পারে। তবে, যদি তারা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যের কারণে রোজা রাখতে পারেন, তবে তাদেরকে কাফফারা দিতে হবে।

মনে বিষন্নতা বা মানসিক অস্থিরতা
রোজা পালন করার সময় কেউ যদি মানসিক চাপ বা গুরুতর বিষন্নতায় আক্রান্ত হন এবং তা তাদের রোজা রাখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তবে এটি রোজার উদ্দেশ্য ব্যাহত করতে পারে। এমন ব্যক্তির জন্য ইসলামিক পরিপন্থী নির্দেশনা রয়েছে, যেখানে তাদের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করা হবে।

অজ্ঞান হওয়া (কমপক্ষে এক দিনের জন্য)
যদি কোনো ব্যক্তি এক দিনের জন্য অজ্ঞান হয়ে যান, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। এটি ইসলামিক দৃষ্টিতে রোজা ভাঙার একটি কারণ হিসেবে গণ্য হয়, কারণ শরীরের সক্ষমতা অনুপস্থিত থাকে।

অত্যধিক ক্লান্তি বা অসুস্থতা
যদি কেউ রোজা রাখা অবস্থায় শরীরিক বা মানসিকভাবে এতটা ক্লান্ত বা অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাদের শারীরিক অবস্থা রোজা রাখার অনুকূল নয়, তবে তারা রোজা ভেঙে ফেলতে পারেন। তবে, এই অবস্থায় তাদেরকে কাফফারা দিতে হবে।

পানির ব্যবহার
কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন সূর্যের তাপ বা অতিরিক্ত পিপাসা হলে, কেউ অনেক বেশি পানি বা তরল গ্রহণ করার জন্য উত্সাহিত হতে পারেন। যদি তারা পানি পান করেন, তবে রোজা ভেঙে যাবে।

রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ কি কি?

রোজা মাকরুহ (অত্যন্ত নিন্দনীয় বা অবাঞ্ছনীয়) হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। এগুলো রোজা ভঙ্গ না করলেও রোজার স্বাদ এবং মর্যাদা কমিয়ে দেয়। রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণগুলি নিম্নরূপ:

  1. অতিরিক্ত তেল বা মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া: বেশি তেল বা মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া রোজার স্বাদ কমিয়ে দেয় এবং রোজা রাখতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। যদিও এটি রোজা ভঙ্গ করে না, তবুও এটি মাকরুহ।
  2. অযথা কথা বলা বা মিথ্যা বলা: রোজার সময় অহেতুক বা মিথ্যা কথা বলা মাকরুহ। রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মসংযম এবং সত্য কথা বলা, তাই এরকম আচরণ রোজার মর্যাদা কমিয়ে দেয়।
  3. অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমানো: রোজার সময় ঘুমানোর ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত সময় বা দীর্ঘ সময় ঘুমানো হয়, তবে এটি মাকরুহ হতে পারে কারণ এতে দিনটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় নষ্ট হয়।
  4. মহিলাদের মেকআপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করা: মহিলাদের রোজা অবস্থায় অতিরিক্ত সুগন্ধি বা মেকআপ ব্যবহার করা মাকরুহ, কারণ এতে দেহে কোনও ধরনের সুগন্ধি বা প্রলোভন সৃষ্টি হতে পারে, যা রোজার শুদ্ধতা কমিয়ে দেয়।
  5. অতি উত্তেজনাকর বা দৃষ্টি আকর্ষণকারী কাজ করা: অতি উত্তেজনাকর টেলিভিশন শো দেখা, সিনেমা বা এমন কিছু কাজ করা যা মনোযোগকে বিভ্রান্ত করে এবং রোজার উদ্দেশ্য থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়, তা মাকরুহ হতে পারে।
  6. অযথা মনগড়া প্রার্থনা বা ইবাদত করা: রোজার সময় যদি অতিরিক্ত অযথা প্রার্থনা বা ইবাদত করা হয়, যা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী, তাহলে তা মাকরুহ।
  7. সিগারেট বা তামাক ব্যবহার করা: রোজার সময় সিগারেট বা তামাক পান করা মাকরুহ, কারণ এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর এবং রোজার উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।
  8. রোজা খোলার সময়ে অতিরিক্ত খাওয়া বা পান করা: ইফতারি খোলার সময় অতিরিক্ত খাওয়া বা পান করা রোজার উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে, এটি মাকরুহ হতে পারে।

এই সকল কাজ রোজার মর্যাদা কমিয়ে দেয় এবং মুসলিমদের রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে আলাদা করে।

রোজা রেখে সহবাস করলে কি রোজা হবে?

রোজা রেখে সহবাস (যৌন সম্পর্ক) করা রোজা ভঙ্গ করে। ইসলামে রোজা রাখার সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ। যদি রোজা অবস্থায় সহবাস করা হয়, তবে রোজা ভেঙে যায় এবং এর জন্য কাফফারা (প্রতিবছর ৬০ দিন রোজা রাখা বা ৬০ জন গরীবকে এক দিন খাবার দেয়া) দিতে হয়।

এছাড়া, রোজার সময় সহবাসের কারণে ঐ দিনের রোজা বাতিল হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে এর জন্য তাওবা করা এবং কাফফারা পালন করা বাধ্যতামূলক।

তবে, ভুলবশত বা ভুলে সহবাস করা হলে, এর জন্য কাফফারা এবং তাওবা প্রয়োজন হয় না, তবে রোজা ভেঙে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে অন্য দিন একটি রোজা রাখা হবে।

নফল রোজা ভঙ্গের কারণ

নফল রোজা (ঐচ্ছিক রোজা) ভঙ্গের কারণগুলো সাধারণত একই ধরনের, যেগুলো ফরজ রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে, নফল রোজা ভঙ্গের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ বিষয়ও খেয়াল রাখতে হয়, কারণ ফরজ রোজা না রাখলে কাফফারা লাগবে, কিন্তু নফল রোজা ভঙ্গের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুঃখ এবং পরবর্তীতে তা পুনরায় রাখা হয়। নফল রোজা ভঙ্গের কারণগুলো নিম্নরূপ:

  1. খাওয়া বা পান করা: নফল রোজা অবস্থায় যদি খাবার বা পানি খাওয়া হয়, তবে রোজা ভেঙে যাবে। তবে, এতে কোনো কাফফারা লাগে না, শুধু রোজা পূর্ণ করতে হবে।
  2. যৌন সম্পর্ক স্থাপন: রোজা ভঙ্গের জন্য যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা নফল রোজার ক্ষেত্রেও নিষিদ্ধ। এর ফলে রোজা ভেঙে যাবে, কিন্তু এর জন্য কাফফারা প্রযোজ্য হয় না, বরং রোজাটি পুনরায় রাখা হবে।
  3. বমি করা (অতিরিক্ত): যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অতিরিক্ত পরিমাণে বমি করা হয়, তবে নফল রোজাও ভেঙে যাবে। ভুলবশত বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে না, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে।
  4. পথে কোনো কিছু প্রবাহিত করা: যেমন, নাক বা মুখের মাধ্যমে কোনো কিছু (যেমন ঔষধ, পানি ইত্যাদি) প্রবাহিত করা, তাও নফল রোজা ভেঙে দেয়।
  5. মাথার ওপর পানি ঢালা: কেউ যদি ভুলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে মাথায় পানি ঢালে এবং তা গিলতে থাকে, তবে রোজা ভেঙে যাবে।
  6. অতিরিক্ত ঘুমানো বা অলসতা: নফল রোজার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুমানো বা অলস সময় কাটানো কোনোভাবে রোজার শুদ্ধতা ক্ষুণ্ন করতে পারে, তবে এটি সরাসরি রোজা ভঙ্গ করে না, তবে এটি রোজার উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়ার প্রতিফলিত হতে পারে।
  7. মিথ্যা বলা বা গালাগালি করা: রোজা ভঙ্গ না হলেও, মিথ্যা বলা বা অসৎ কাজ করা রোজার সওয়াব কমিয়ে দেয় এবং রোজার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত করতে পারে।

এগুলি নফল রোজা ভঙ্গের কারণ হলেও, ফরজ রোজা ভঙ্গের মতো কোনো কাফফারা লাগে না। তবে, নফল রোজা পুনরায় রাখার প্রয়োজন হয়।

রোজা ভঙ্গের কারণ হাদিস

রোজা ভঙ্গের কারণের সাথে সম্পর্কিত হাদিসগুলো ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী রোজা রাখার সময় কি কি কাজ করা উচিত নয়, তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নিম্নরূপ:

খাওয়া বা পান করা:

  • হাদিস: “যে ব্যক্তি ভুলে খেয়েছে অথবা পান করেছে, সে যেন তা সম্পূর্ণ করে ফেলে, তারপর তার রোজা সঠিক থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)

ব্যাখ্যা: যদি কেউ ভুলে খাওয়া বা পান করে, তবে তার রোজা ভেঙে যায় না। তাকে পরে খাওয়া বা পান করা বন্ধ রাখতে হবে এবং রোজা পূর্ণ করতে হবে।

যৌন সম্পর্ক স্থাপন:

  • হাদিস: “যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, সে যেন ৬০ দিনের রোজা রাখে অথবা ৬০ জন গরীবকে খাবার দেয়।” (সহীহ মুসলিম)

ব্যাখ্যা: রোজা অবস্থায় সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায় এবং এর জন্য কাফফারা (৬০ দিনের রোজা রাখা অথবা ৬০ জন গরীবকে খাওয়ানো) দিতে হয়।

বমি করা:

  • হাদিস: “যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তার রোজা ভেঙে যাবে।” (সহীহ বুখারি)

ব্যাখ্যা: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা রোজা ভঙ্গ করে, তবে ভুলবশত বমি করা হলে রোজা ভেঙে যায় না।

অতিরিক্ত কিছু গিলানো:

  • হাদিস: “যে ব্যক্তি জানিয়ে বা অজান্তে কিছু খেয়ে ফেলে, সে যেন তা পূর্ণ করে রাখে এবং তার রোজা সঠিক থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)

ব্যাখ্যা: যদি কেউ ভুলে বা অজান্তে খাওয়া বা পান করে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে না। তাকে পরে রোজা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রথম সূর্যাস্তের আগে রোজা খোলা:

  • হাদিস: “এমন সময় আসবে, যখন লোকেরা রোজা খোলার পূর্বে খাবার খাবে, তখন তাদের রোজা সঠিক হবে না।” (সহীহ মুসলিম)

ব্যাখ্যা: সঠিক সময়ে ইফতার করা গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ সূর্যাস্তের সময়ে রোজা খোলার আগে খাওয়া বা পান করা রোজা ভঙ্গ করে।

এছাড়াও, রোজা ভঙ্গের অন্যান্য কারণগুলি যেমন মিথ্যা বলা, গালিগালাজ করা বা অশ্লীল কাজ করা, সেগুলি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে রোজার মূল উদ্দেশ্য রক্ষা হয়।

মুখ্য বিষয়: রোজা ভঙ্গের জন্য সাধারণত দুটি কারণ—খাওয়া বা পান করা এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা, যা শরীয়তের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রোজা ভাঙার পর কী করতে হবে?

রোজা ভাঙার পর মুসলিমদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে, কুরআন এবং হাদিস অনুযায়ী, রোজা ভাঙলে কী ধরনের শাস্তি বা কাফফারা দিতে হবে তা স্পষ্ট। তাছাড়া, রোজা ভেঙে ফেললে তওবা করা জরুরি।

কাফফারা

যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করেন, তবে তাদেরকে কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা হল দুইটি উপায়:

দু’জন দরিদ্র ব্যক্তিকে দুটি পরিপূর্ণ খাবার প্রদান করা।

এক মাস রোজা রাখা (এটি অক্ষম হলে কাফফারা হিসেবে অন্যান্য পরিসেবা প্রদান করা যেতে পারে)।

তওবা করা
যে কেউ রোজা ভেঙে ফেলেছে, তাকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ইসলামে তওবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ তাআলা সব সৃষ্টির দোষ মাফ করতে পারেন।

রোজা ভাঙার শারীরিক ও মানসিক প্রভাব

  • শারীরিক প্রভাব: রোজা ভাঙার কারণে শরীরের মেটাবলিজমে প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষত অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে শরীরে অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। তবে, প্রকৃতপক্ষে রোজা শরীরের জন্য উপকারী। রোজা ভেঙে ফেললে কিছু সময়ের জন্য শরীরে অস্বস্তি বা অবস্থা খারাপ হতে পারে।
  • মানসিক প্রভাব: রোজা ভেঙে ফেললে একজন মুসলিম আত্মিকভাবে দুঃখিত হতে পারেন। এই পরিস্থিতি মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং তারা নিজেদের অপরাধ বোধে ডুবতে পারে। তাই তওবা করে শান্তি লাভ করতে হবে।

উপসংহার

রোজা ভাঙার কারণ এবং তার পরিণতি সম্পর্কে জানার মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের ইবাদত আরও সতর্কভাবে পালন করতে পারবেন। শারীরিক বা মানসিক কোন কারণে যদি রোজা ভাঙে, তবে তা তওবা এবং কাফফারার মাধ্যমে সংশোধন করা যেতে পারে। সঠিক জ্ঞানের সাথে রোজা পালন করলে ধর্মীয় জীবন আরো ভালো ও ফলপ্রসূ হতে পারে।

প্রশ্ন-উত্তর 

প্রশ্ন: রোজা ভাঙলে কী করতে হবে?

উত্তর: রোজা ভেঙে গেলে, তা পুনরায় রাখতে হবে এবং কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা হিসেবে দু’জন দরিদ্রকে খাবার দেওয়া যেতে পারে বা এক মাস রোজা রাখা যেতে পারে।

প্রশ্ন: অজান্তে খাবার খেলে রোজা ভাঙবে কি?

উত্তর: না, অজান্তে খাবার খেলে রোজা ভাঙবে না। তবে তা জানাজানি হওয়ার পর দ্রুত তওবা করা উচিত।

প্রশ্ন: শারীরিক সম্পর্ক করলে রোজা ভাঙবে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, শারীরিক সম্পর্ক করলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাফফারা প্রদান করা হবে।

প্রশ্ন: রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ গুলো কি কি?
  • খাওয়া বা পান করা: রোজা অবস্থায় খাবার বা পানি খাওয়া রোজা ভঙ্গ করে। এমনকি ভুলবশত খাওয়া বা পান করা হলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে কিছু শর্তে এর জন্য কেবলমাত্র তাওবা বা কাফফারা প্রয়োজন হয় না, যেমন যদি মনে না থাকে বা ভুলে খাওয়া হয়।
  • যৌন সম্পর্ক স্থাপন: রোজা অবস্থায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হয়, অর্থাৎ ৬০ দিন রোজা রাখা বা ৬০ জন গরীবকে খাবার দেয়া।
  • পথের মাধ্যমে পিপাসা বা খিদে উপশম করা: নাক, মুখ, বা অন্য কোনো শারীরিক পথের মাধ্যমে খাবার বা পানি প্রবাহিত করা।
  • মস্তিষ্কের মধ্যে কোনও বস্তু প্রবাহিত হওয়া: ইনজেকশন বা কোনো ধরনের ওষুধ, সেলাই বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যদি কিছু রোজা ভঙ্গের উপযোগী দেহে প্রবাহিত হয়, তবে এটি রোজা ভঙ্গ করে।
  • উল্টো দৃষ্টিতে বা হাস্যকর উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করা: যেমন রোজা ভঙ্গের উদ্দেশ্যে খাওয়া বা পান করা।
  • ঋতুস্রাব বা শিশু জন্ম দেওয়া: মহিলাদের জন্য যদি ঋতুস্রাব বা সন্তান জন্ম দেয়া হয় তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
  • বিশাল পরিমাণ বমি করা: অজান্তে বা ইচ্ছাকৃতভাবে যদি বিশাল পরিমাণ বমি করা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি। বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।