রুকু থেকে দাঁড়িয়ে কি পড়তে হয়?

ইসলামে নামাজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মুসলিমদের জন্য আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ ও আধ্যাত্মিক সংযোগের একটি মাধ্যম। নামাজের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি অবস্থান এবং প্রতিটি পাঠ্য নির্দিষ্ট নিয়ম ও আদবের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়ানো নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এই অবস্থান পরিবর্তনের সময় কী পড়তে হয় তা জানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক।

রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় নির্দিষ্ট দুআ পড়া নামাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এবং এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী আদায় করা হয়। এই ব্লগ পোস্টে আমরা রুকু থেকে দাঁড়িয়ে কি পড়তে হয়, এর গুরুত্ব, ইসলামিক দৃষ্টিকোণ এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

রুকু থেকে দাঁড়িয়ে কি পড়তে হয়?

রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় নামাজিরা সাধারণত “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” (سمع الله لمن حمده) বলে থাকেন। এর অর্থ হলো, “আল্লাহ তার প্রশংসা শোনেন, যারা তার প্রশংসা করে।” এরপর নামাজি দাঁড়িয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” (ربنا ولك الحمد) বলে। এর অর্থ হলো, “হে আমাদের রব, সকল প্রশংসা আপনার জন্যই।”

এই দুটি বাক্য নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী পড়া হয়। এটি নামাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে এবং নামাজের সৌন্দর্য বাড়ায়।

রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পাঠের গুরুত্ব

  1. নামাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা: রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় নির্দিষ্ট দুআ পড়া নামাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। এটি নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর মাধ্যমে নামাজি আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
  2. সুন্নতের অনুসরণ: রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় এই দুআ পড়তেন। তাই এটি পড়া তার সুন্নতের অনুসরণ এবং এটি আমাদের জন্য একটি পুণ্যের কাজ।
  3. আল্লাহর প্রশংসা: “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” এবং “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি। এটি আমাদেরকে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শেখায়।

রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পাঠের হাদিস ভিত্তিক প্রমাণ

এই বিষয়ে হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলতেন এবং দাঁড়িয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলতেন। এটি নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং প্রতিটি মুসলিমের জন্য এটি অনুসরণ করা আবশ্যক।

রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় সাধারণ ভুলসমূহ

  1. দুআ না পড়া: অনেকেই রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় এই দুআ পড়তে ভুলে যান। এটি নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি না পড়লে নামাজের পূর্ণতা নষ্ট হয়।
  2. দ্রুত পড়া: কিছু মানুষ এই দুআ দ্রুত পড়ে ফেলেন, যা নামাজের আদবের পরিপন্থী। নামাজে ধীরস্থিরতা ও মনোযোগের সাথে প্রতিটি কাজ করা উচিত।
  3. ভুল উচ্চারণ: কিছু মানুষ এই দুআ ভুল উচ্চারণ করে থাকেন। এটি নামাজের সঠিকতা নষ্ট করে। তাই সঠিক উচ্চারণ শেখা এবং তা অনুসরণ করা জরুরি।

রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পাঠের সঠিক পদ্ধতি

  1. রুকু থেকে ধীরে ধীরে দাঁড়ানো: রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় ধীরে ধীরে দাঁড়ানো উচিত। এটি নামাজের আদবের অংশ।
  2. সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলা: রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলা উচিত।
  3. দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ বলা: দাঁড়ানোর পর “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা উচিত।
  4. মনোযোগ সহকারে পড়া: এই দুআ মনোযোগ সহকারে পড়া উচিত। এটি নামাজের সৌন্দর্য বাড়ায়।

রুকু থেকে উঠার পর দোয়ার ফজিলত

হাদিস শরিফে রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় এই দুআ পড়ার বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন ইমাম ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে, তখন তোমরা ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলো। কারণ, যে ব্যক্তির এই কথাগুলো ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যায়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারি, হাদিস নং ৭৯৬)।

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় এই দুআ পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত লাভ করতে পারি।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় কি শুধু “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বললেই হবে?

উত্তর: না, শুধু “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বললেই হবে না। এরপর দাঁড়িয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলতে হবে। এটি নামাজের পূর্ণতা আনে।

প্রশ্ন ২: যদি কেউ এই দুআ ভুলে যায়, তাহলে কি নামাজ ভেঙে যাবে?

উত্তর: না, নামাজ ভাঙবে না। তবে এটি নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি পড়া উচিত। ভুলে গেলে পরবর্তীতে সিজদায় সাহু করে নিতে হবে।

প্রশ্ন ৩: এই দুআ কি বাংলায় পড়া যাবে?

উত্তর: না, নামাজের দুআ ও কিরাত আরবিতে পড়া আবশ্যক। বাংলায় পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।