রমজান মাস ছাড়া রোজা রাখার নিয়ত ও ফজিলত

রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে রমজান মাস ছাড়া সারা বছর নফল রোজা রাখার ফজিলত এবং নিয়ম নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা রমজান মাস ছাড়া রোজা রাখার নিয়ত, এর গুরুত্ব, শরীয়াহ ভিত্তিক বিধান, এবং এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।

রমজান মাস ছাড়া রোজা রাখার গুরুত্ব

রমজানের রোজা মুসলিমদের উপর ফরজ, তবে নফল রোজা রাখার মাধ্যমে ব্যক্তি অতিরিক্ত সওয়াব অর্জন করতে পারেন। ইসলামে নফল রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি নফল রোজা রাখে, আল্লাহ তার মুখ এবং জাহান্নামের মধ্যে সত্তর বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করেন।” (সহীহ মুসলিম)

নফল রোজাগুলো শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতই নয়, এটি আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

নফল রোজার ধরন

রমজান মাস ছাড়া যেসব নফল রোজা রাখা যেতে পারে তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হল:

  1. সোম এবং বৃহস্পতিবারের রোজা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। তিনি বলেছেন: “সোম এবং বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে আমলনামা উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই আমার আমলনামা রোজা অবস্থায় উপস্থাপিত হোক।” (তিরমিজি)
  2. শাওয়ালের ছয়টি রোজা রমজানের পরে শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। এটি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং এর পরে শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।” (সহীহ মুসলিম)
  3. আশুরার রোজা মুহররম মাসের দশম দিন আশুরার রোজা রাখা খুবই ফজিলতপূর্ণ। এটি পূর্ববর্তী বছরের পাপ মোচনের মাধ্যম হিসেবে গণ্য হয়।
  4. আরাফার দিন রোজা হজের সময় আরাফার দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এটি দুই বছরের (একটি আগের এবং একটি পরের) পাপ মোচন করে।
  5. দাউদ (আঃ)-এর রোজা সপ্তাহে এক দিন রোজা রেখে এক দিন ছেড়ে রাখার পদ্ধতিকে দাউদ (আঃ)-এর রোজা বলা হয়। এটি সর্বোত্তম নফল রোজা।

রোজার নিয়ত করার পদ্ধতি

নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। রোজার নিয়ত মন থেকে করাই যথেষ্ট; তবে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করাও সুন্নাহ। উদাহরণস্বরূপ:

নিয়ত: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল নফল রোজা রাখছি।”

নিয়ত মূলত ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাজ করার সংকল্প।

রোজার নিয়ত

রোজার নিয়ত মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার মানসিক সিদ্ধান্ত। এটি মুখে বলা বাধ্যতামূলক নয়, তবে বলা যেতে পারে। নিয়ত মূলত অন্তরের ব্যাপার। আপনি যদি মনে মনে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেন, সেটিই যথেষ্ট।

তবে অনেকেই নিয়ত করার জন্য আরবি বা বাংলায় কিছু নির্দিষ্ট বাক্য ব্যবহার করেন। এখানে আরবি এবং বাংলা ভাষায় নিয়তের উদাহরণ দেওয়া হলো:

রমজানের রোজার নিয়ত (আরবি):

“وَبِصَوْمِ غَدٍ نَوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ”
উচ্চারণ: “ওয়া বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রমাদান”
অর্থ: আমি রমজান মাসের আগামী দিনের রোজা রাখার নিয়ত করলাম।

বাংলা ভাষায় নিয়ত:“আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আগামী দিনের রোজা রাখার নিয়ত করছি।”

নফল রোজার বিধি-বিধান

  1. রোজা ভাঙার কারণসমূহ • ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ। • ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সহবাস। • অজ্ঞান হওয়া বা মাসিক শুরু হওয়া।
  2. কাজা বা কাফফারা লাগবে কি? নফল রোজা ভাঙলে কাজা করতে হবে, তবে কাফফারা লাগবে না।

নফল রোজার নিয়ত

নফল রোজা রাখার জন্য নির্দিষ্টভাবে আরবি বা বাংলায় কোনো কঠোর নিয়ত প্রয়োজন নেই। আপনি যদি মনে মনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নফল রোজা রাখার ইচ্ছা করেন, তাতেই নিয়ত হয়ে যায়। তবে নিয়ত করার একটি সহজ বাংলা বাক্য হতে পারে:

“আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নফল রোজা রাখছি।”

আরবি ভাষায়ও নিয়ত করতে চাইলে বলতে পারেন:

“نَوَيْتُ صَوْمَ غَدٍ تَطَوُّعًا لِلّٰهِ تَعَالَى”

উচ্চারণ: “নাওয়াইতু সাওমা গাদিন তাতাওউ’আঁ লিল্লাহি তা’আলা”
অর্থ: আমি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের নফল রোজার নিয়ত করেছি।

নফল রোজার উপকারিতা

  1. আত্মশুদ্ধি: এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং ধৈর্য শেখায়।
  2. স্বাস্থ্য উপকারিতা: নিয়মিত রোজা দেহকে ডিটক্সিফাই করে।
  3. আল্লাহর নৈকট্য: এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

১. নফল রোজার জন্য সাহরি খাওয়া কি আবশ্যক?

না, নফল রোজার জন্য সাহরি খাওয়া আবশ্যক নয়, তবে এটি সুন্নত এবং বরকতপূর্ণ। সাহরি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “সাহরি খাও, কারণ এতে বরকত রয়েছে।” (সহীহ বুখারি)

২. নফল রোজা কি মাগরিবের পরে নিয়ত করা যায়?

হ্যাঁ, যদি ফজরের আগে কিছু না খাওয়া বা পান করা হয় তবে মাগরিবের পরও নিয়ত করা যায়।

৩. গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েরা নফল রোজা রাখতে পারবেন?

হ্যাঁ, তবে তাদের শরীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি রোজা তাদের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে তা এড়িয়ে চলা উচিত।

উপসংহার

রমজান মাস ছাড়া নফল রোজা রাখা আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি উত্তম মাধ্যম। নিয়মিত নফল রোজা আমাদের দৈহিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে শরীরের সামর্থ্য এবং ইবাদতের প্রতি আন্তরিকতা বজায় রাখা জরুরি।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি। বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।