বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন (Birth Registration) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। স্কুলে ভর্তি, পাসপোর্ট তৈরি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা যেকোনো সরকারি কাজে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক সময় ভুয়া বা জাল জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে মানুষকে প্রতারণার শিকার করা হচ্ছে। তাই আসল ও ভুয়া জন্ম নিবন্ধন চেনার সঠিক নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই ব্লগে আমরা ধাপে ধাপে দেখব কিভাবে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন শনাক্ত করবেন এবং কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
আরও পড়ুন-অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম
কেন ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা হয়?
ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মূল উদ্দেশ্য হলো—
-
বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেখানো (চাকরি বা পড়াশোনার সুবিধার জন্য)।
-
বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স পরিবর্তন।
-
একাধিক পরিচয় তৈরি।
-
অবৈধভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ।
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন চেনার উপায়
১. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যাচাই
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো অনলাইনে যাচাই করা।
👉 ওয়েবসাইটে যান: https://everify.bdris.gov.bd/
👉 জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্মতারিখ এবং অন্যান্য তথ্য দিয়ে চেক করুন।
👉 যদি তথ্য মেলে না বা “Record Not Found” আসে, তবে এটি ভুয়া।
২. জন্ম নিবন্ধন নম্বর (BRN) যাচাই
-
আসল জন্ম নিবন্ধনে ১৭ সংখ্যার BRN নম্বর থাকে।
-
নম্বর ভাঙা বা ছোট/বড় হলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৩. তথ্যের মিল খুঁজে দেখা
-
নাম, পিতার নাম, মায়ের নাম এবং জন্ম তারিখ সঠিকভাবে মিলছে কিনা চেক করুন।
-
অনেক সময় ভুয়া নিবন্ধনে বানান ভুল থাকে অথবা সরকারি রেকর্ডের সাথে মেলে না।
৪. কাগজের গুণমান ও সিল যাচাই
-
আসল জন্ম নিবন্ধনে ইউনিক ডিজিটাল প্রিন্ট এবং নির্দিষ্ট ডিজাইন থাকে।
-
ভুয়া কাগজে প্রিন্টের মান খারাপ হয়, সরকারি সিল বা স্বাক্ষর নকল থাকে।
৫. স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন যাচাই
-
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে গিয়ে যাচাই করা যায়।
-
আসল রেকর্ড তাদের ডাটাবেজে থাকে, ভুয়া থাকলে কোনো রেকর্ড পাওয়া যাবে না।
৬. অনলাইন QR কোড যাচাই
নতুন জন্ম নিবন্ধনে QR কোড দেওয়া থাকে।
👉 মোবাইল দিয়ে স্ক্যান করলে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবে।
👉 লিঙ্ক না খুললে বা ভিন্ন তথ্য দেখালে সেটি ভুয়া।
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ব্যবহারের ঝুঁকি
-
সরকারি চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে
-
পাসপোর্ট বা ভিসা বাতিল হতে পারে
-
আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন
-
ভবিষ্যতে শিক্ষা, ব্যাংকিং, সম্পত্তি বা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কাজে সমস্যা হতে পারে
কী করবেন যদি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন পাওয়া যায়?
-
সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় অভিযোগ করুন।
-
ভুয়া নিবন্ধন বাতিল করে আসল তথ্য দিয়ে নতুন নিবন্ধন করুন।
-
প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নিন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১: কিভাবে বুঝব জন্ম নিবন্ধন ভুয়া নাকি আসল?
উত্তর: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (everify.bdris.gov.bd) চেক করলে যদি তথ্য মিলে যায় তবে আসল, না মিললে ভুয়া।
প্রশ্ন ২: জন্ম নিবন্ধন নম্বর কয় সংখ্যার হয়?
উত্তর: আসল জন্ম নিবন্ধন নম্বর সবসময় ১৭ সংখ্যার হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ৩: ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করলে কী শাস্তি হতে পারে?
উত্তর: সরকারি নথি জাল করার অপরাধে মামলা হতে পারে, চাকরি বা পাসপোর্ট বাতিল হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: QR কোড স্ক্যান করলে কী তথ্য পাওয়া যায়?
উত্তর: QR কোড স্ক্যান করলে জন্ম নিবন্ধনের আসল তথ্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চলে আসে।
উপসংহার
ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কারণে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই জন্ম নিবন্ধন তৈরি বা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই অনলাইনে যাচাই করে নিন। সঠিক তথ্য ব্যবহার করুন, সরকারি রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে নিন এবং যেকোনো সন্দেহ হলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন—একটি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন আপনাকে আজীবনের জন্য সমস্যায় ফেলতে পারে।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-৫ মিনিটে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড করার নিয়ম(আপডেট)
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔