ইসলাম ধর্মে ওযু বা অজু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কার্যাবলীর পূর্বে ওযু করা ফরজ। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার কারণে ওযু ভেঙে যায় কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। আজকের আলোচনার মূল বিষয় হলো, “বমি করলে কি ওযু ভেঙে যায়?” এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি আমরা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করব।
ওযু কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ওযু হলো ইসলাম ধর্মে একটি পবিত্রতা অর্জনের প্রক্রিয়া, যা নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সম্পন্ন করা হয়। এটি শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম। ওযুর মাধ্যমে মুসলিমরা নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হয়। ওযু ভঙ্গের কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কি কি করলে ওযু ভেঙে যায়?
ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট কাজ বা অবস্থার কারণে ওযু ভেঙে যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
Also Read
১. প্রস্রাব বা পায়খানা করা।
২. বাতাস নির্গত হওয়া।
৩. গভীর নিদ্রা বা অচেতন অবস্থা।
৪. রক্ত বা পুঁজ বের হওয়া।
৫. বমি করা।
এই কারণগুলোর মধ্যে বমি করা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। বমি করলে কি ওযু ভেঙে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে ইসলামিক শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হবে।
বমি করলে কি ওযু ভেঙে যায়?
ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী, বমি করলে ওযু ভাঙে কিনা তা নির্ভর করে বমির পরিমাণ এবং প্রকৃতির উপর। নিম্নলিখিত দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়:
১. হানাফি মাযহাব অনুযায়ী
হানাফি মাযহাব মতে, যদি বমির পরিমাণ কম হয় এবং তা মুখ ভর্তি না হয়, তবে ওযু ভাঙে না। তবে যদি বমির পরিমাণ বেশি হয় এবং তা মুখ ভর্তি হয়ে যায়, তাহলে ওযু ভেঙে যায়। এই মতানুযায়ী, বমির পরিমাণই মূল নির্ধারক।
২. শাফেয়ী ও হাম্বলি মাযহাব অনুযায়ী
শাফেয়ী এবং হাম্বলি মাযহাব মতে, যেকোনো পরিমাণ বমি করলে ওযু ভেঙে যায়। এই মাযহাবগুলোর দৃষ্টিতে বমি ওযু ভঙ্গের একটি কারণ।
আরও–বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়?
কুরআন ও হাদীসের আলোকে বমি এবং ওযু
কুরআন ও হাদীসে সরাসরি বমি এবং ওযু ভঙ্গের সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে হাদীসে ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে বমির উল্লেখ রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বমি করেছে, সে যেন নতুন করে ওযু করে।” (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১১২)।
এই হাদীসটি থেকে বোঝা যায় যে, বমি করলে ওযু ভেঙে যায় এবং নতুন করে ওযু করা প্রয়োজন। তবে এই হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে।
ওযু ভঙ্গের ক্ষেত্রে বমির প্রকৃতি
বমির প্রকৃতি এবং পরিমাণ ওযু ভঙ্গের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি বমি সামান্য পরিমাণে হয় এবং তা মুখ ভর্তি না হয়, তবে অনেক ইসলামিক স্কলার একে ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য করেন না। তবে যদি বমি বেশি পরিমাণে হয় এবং তা মুখ ভর্তি হয়ে যায়, তাহলে ওযু ভেঙে যায় বলে ধরা হয়।
ওযু ভঙ্গের পর কী করণীয়?
যদি বমির কারণে ওযু ভেঙে যায়, তাহলে নতুন করে ওযু করা প্রয়োজন। ওযু করার সময় ইসলামিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। ওযুর ধাপগুলো হলো:
১. নিয়ত করা।
২. হাত ধোয়া।
৩. কুলি করা।
৪. নাক পরিষ্কার করা।
৫. মুখমণ্ডল ধোয়া।
৬. হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া।
৭. মাথা মাসাহ করা।
৮. পা গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়া।
ওযু সম্পন্ন করার পর নামাজ বা অন্যান্য ইবাদত করা যাবে।
মজি বের হলে কি ওযু ভেঙে যায়?
হ্যাঁ, মজি (যৌনাঙ্গ থেকে নির্গত তরল) বের হলে ওযু ভেঙে যায়। ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী, যদি কাউকে মজি বের হয়, তাহলে তার ওযু ভেঙে যায় এবং তাকে নতুন করে ওযু করতে হবে।
এটি অজ্ঞানতা বা ইচ্ছাকৃত নয়, তবে শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই ঘটনা ঘটতে পারে।
না, শুয়ে থাকলে ওযু ভেঙে যায় না।
ওযু ভাঙার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আছে, যেমন—প্রস্রাব, পেশাব, বমি, বা ঘুমানো (যদি গভীর ঘুম হয়) ইত্যাদি। কিন্তু শুধু শুয়ে থাকার কারণে ওযু ভেঙে যাবে না।
প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: বমি করলে কি সবসময় ওযু ভেঙে যায়?
উত্তর: না, সবসময় নয়। হানাফি মাযহাব অনুযায়ী, বমির পরিমাণ কম হলে ওযু ভাঙে না। তবে শাফেয়ী ও হাম্বলি মাযহাব মতে, যেকোনো পরিমাণ বমি করলে ওযু ভেঙে যায়।
প্রশ্ন ২: বমি করার পর ওযু না করলে নামাজ হবে কি?
উত্তর: যদি বমির কারণে ওযু ভেঙে যায়, তাহলে নতুন করে ওযু না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। তাই ওযু করে নেওয়া আবশ্যক।
প্রশ্ন ৩: বমি করার পর ওযু করার সময় কী কী বিষয় মনে রাখা উচিত?
উত্তর: বমি করার পর ওযু করার সময় কুলি করা এবং নাক পরিষ্কার করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এতে মুখের ভিতরের অংশ পরিষ্কার হয়।
উপসংহার
বমি করলে ওযু ভাঙে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর ইসলামিক মাযহাবগুলোর উপর নির্ভর করে। হানাফি মাযহাব মতে, বমির পরিমাণ কম হলে ওযু ভাঙে না, তবে শাফেয়ী ও হাম্বলি মাযহাব মতে, যেকোনো পরিমাণ বমি করলে ওযু ভেঙে যায়। তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত নিজের অনুসৃত মাযহাবের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করা। ওযু ভঙ্গের পর নতুন করে ওযু করা এবং নামাজ বা অন্যান্য ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔