তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া আরবিতে বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ

রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় একটি সময়। এই মাসে মুসলিমরা রোজা রাখেন, তারাবির নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। তারাবির নামাজ রমজানের বিশেষ একটি ইবাদত, যা রাতের বেলা আদায় করা হয়। এই নামাজের মধ্যে চার রাকাত পরপর বিশেষ দোয়া পাঠের একটি রীতি রয়েছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া আরবিতে বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ নিয়ে আলোচনা করব।

তারাবির নামাজ কি?

তারাবির নামাজ হল রমজান মাসের রাতের বিশেষ নামাজ, যা ইশার নামাজের পর আদায় করা হয়। এটি সাধারণত ২০ রাকাত হয়ে থাকে, তবে কিছু কিছু মাজহাবে ৮ রাকাতও পড়া হয়। তারাবির নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা সুন্নত। এই নামাজের মাধ্যমে মুসলিমরা রমজানের রাতগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে সজীব করে তোলেন।

তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া

তারাবির নামাজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল চার রাকাত পরপর দোয়া পাঠ করা। এই দোয়াটি আরবিতে বলা হয় এবং এর বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরবি:
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ نَسْتَغْفِرُ اللهَ، نَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

বাংলা উচ্চারণ:
সুবহানা যিল মূলকি ওয়াল মালাকূত, সুবহানা যিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল জাবরূত, সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল্লাজি লা ইয়ামূত, সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু নাসতাগফিরুল্লাহ, নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযু বিকা মিনান নার।

অর্থ:
সকল রাজত্ব ও সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি, পবিত্র মহান। তিনি সম্মান, মহিমা, ভয়, ক্ষমতা, গৌরব ও শক্তির মালিক। তিনি জীবিত রাজা, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করেন না। তিনি পবিত্র ও মহান, ফেরেশতাদের ও রূহের পালনকর্তা। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

তারাবির নামাজের দোয়ার গুরুত্ব

এই দোয়াটি তারাবির নামাজের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি পাঠের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার কথা স্মরণ করেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা, জান্নাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চান। এটি একটি শক্তিশালী দোয়া, যা মুসলিমদের আত্মিক উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে।

তারাবির নামাজের দোয়া

আরবি:
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ، وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ، وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ، رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ نَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، نَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.

🔹 বাংলা উচ্চারণ:

“সুবহানা জিল-মুলকি ওয়াল-মালাকূত, সুবহানা জিল-ইজ্জতি ওয়াল-আযমাতি, ওয়াল-হাইবাতি ওয়াল-কুদরাতি, ওয়াল-কিবরিয়াই ওয়াল-জাবারূত। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাযি লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুত। সুব্বূহুন কুদ্দূস, রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু নাসতাগফিরুল্লাহ, নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাঊযুবিকা মিনান্নার।”

🔹 বাংলা অর্থ:

“পরম পবিত্র ও মহিমান্বিত আল্লাহ, যিনি রাজত্ব ও পরাক্রমের অধিকারী। তিনি শক্তি, গরিমা, মহত্ত্ব, প্রতাপ ও সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি সেই মহান সম্রাট, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি ঘুমান না এবং কখনো মৃত্যুবরণ করেন না। তিনি মহাপবিত্র, সর্বোচ্চ পবিত্র। তিনি আমাদের রব এবং ফেরেশতাদের ও জিবরাঈল (আ.)-এর রব। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, আমরা তোমার কাছে জান্নাত চাই এবং তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।”

তারাবির নামাজের নিয়ত

তারাবির নামাজ ২ রাকাত করে আদায় করা হয়, তাই প্রতি ২ রাকাতের জন্য আলাদা নিয়ত করতে হবে।

🔹 তারাবির নামাজের আরবি নিয়ত:

نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ سُنَّةَ التَّرَاوِيحِ رَكْعَتَيْنِ لِلَّهِ تَعَالَى مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ، اَللَّهُ أَكْبَرُ

🔹 বাংলা উচ্চারণ:

“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সুন্নাতাল তারাবীহি রাকআতাইন লিল্লাহি তা’আলা মুস্তাকবিলাল কিবলাহ, আল্লাহু আকবার।”

🔹 বাংলা অর্থ:

“আমি কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত তারাবির সুন্নাত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”

তারাবির নামাজের মোনাজাত

তারাবির নামাজের পর যেকোনো দোয়া করা যায়। তবে সাধারণত নিম্নোক্ত দোয়াটি বেশি পড়া হয়:

🔹 আরবি দোয়া:

اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ المُتَطَهِّرِينَ، وَاجْعَلْنَا مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ الَّذِينَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ حَيَاتَنَا زِيَادَةً لَنَا فِي كُلِّ خَيْرٍ، وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لَنَا مِنْ كُلِّ شَرٍّ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَلِوَالِدِينَا وَلِجَمِيعِ الْمُسْلِمِينَ، بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.

🔹 বাংলা উচ্চারণ:

“আল্লাহুম্মাজআলনা মিনাত্ তাওয়াবীন, ওয়াজআলনা মিনাল মুতাতাহ্ হিরীন, ওয়াজআলনা মিন ইবাদিকাস সালিহীন, ওয়াজআলনা মিনাল্লাযিনা লা খাওফুন আলাইহিম ওয়ালা হুম ইয়াহ্ জানুন।
আল্লাহুম্মাজআল হায়াতানা জিয়াদাতাল্লানা ফি কুল্লি খাইর, ওয়াজআলিল মাওতা রাহাতাল্লানা মিন কুল্লি শার্।
আল্লাহুম্মাগফির লানা ওয়ালি ওয়ালিদাইনা ওয়ালি জামি ইল মুসলিমীন, বিরাহমাতিকা বা আরহামার রাহিমীন।”

🔹 বাংলা অর্থ:

“হে আল্লাহ! আমাদেরকে তওবা করার তাওফিক দান করুন, আমাদেরকে পবিত্র বানান, আমাদেরকে তোমার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাদের জন্য কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
হে আল্লাহ! আমাদের জীবনকে কল্যাণ বৃদ্ধির মাধ্যম বানিয়ে দাও এবং আমাদের মৃত্যুকে সকল অমঙ্গল থেকে মুক্তির মাধ্যম করো।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে, আমাদের পিতামাতাকে এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন।
হে দয়াময়, তোমার রহমতের দ্বারা আমাদের প্রতি দয়া করো।”

তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবির নামাজ আদায়ের কিছু নিয়ম রয়েছে:
১. ইশার নামাজের পর তারাবির নামাজ পড়া হয়।
২. সাধারণত ২০ রাকাত পড়া হয়, প্রতি ৪ রাকাত পরপর সামান্য বিশ্রাম নেওয়া হয়।
৩. প্রতি ৪ রাকাত পরপর উপরে উল্লিখিত দোয়া পাঠ করা হয়।
৪. নামাজ শেষে বিতরের নামাজ পড়া হয়।

তারাবির নামাজের ফজিলত

রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)

৪ রাকাত তারাবীহ পড়া যাবে কি?

হ্যাঁ, ৪ রাকাত করে তারাবীহ পড়া যায়। তবে সাধারণত সুন্নাত তরীকায় ২ রাকাত করে তারাবীহ নামাজ পড়া উত্তম, কারণ হাদিসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ২ রাকাত করে তারাবীহ পড়তেন।

চার রাকাত তারাবির পর কোন দোয়া আছে কি?

চার রাকাত তারাবির পর বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই, তবে সাধারণত তারাবির নামাজের মাঝে তাসবীহ বা দুয়া পড়া হয়ে থাকে। অনেক মসজিদে প্রতি চার রাকাত পর  দোয়া পড়া হয় ।

৮ রাকাত তারাবীহ পড়া যাবে কি?

৮ রাকাত তারাবীহ পড়া বৈধ এবং কোনো সমস্যা নেই, তবে ২০ রাকাত পড়া উত্তম ও অধিক অনুসরণযোগ্য।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: তারাবির নামাজ কত রাকাত?

উত্তর: সাধারণত তারাবির নামাজ ২০ রাকাত হয়ে থাকে, তবে কিছু মাজহাবে ৮ রাকাতও পড়া হয়।

প্রশ্ন ২: তারাবির নামাজে চার রাকাত পরপর কোন দোয়া পড়া হয়?

উত্তর: তারাবির নামাজে চার রাকাত পরপর নিম্নোক্ত দোয়া পড়া হয়:
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ…

প্রশ্ন ৩: তারাবির নামাজের ফজিলত কি?

উত্তর: হাদিস অনুযায়ী, ঈমান ও সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায়কারীর পূর্বের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

প্রশ্ন ৪: তারাবির নামাজ কখন পড়া হয়?

উত্তর: তারাবির নামাজ ইশার নামাজের পর পড়া হয়।

প্রশ্ন ৫: তারাবির নামাজে দোয়া পাঠের গুরুত্ব কি?

উত্তর: দোয়া পাঠের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা, জান্নাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চান।

উপসংহার

তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই নামাজের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা ও জান্নাত প্রার্থনা করেন। চার রাকাত পরপর দোয়া পাঠের মাধ্যমে এই ইবাদতের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আপনি তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া আরবিতে বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ জানতে পেরেছেন।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি। বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।