জুমার দিনে যে দোয়া পড়লে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়

জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন। এই দিনে দোয়া, ইবাদত ও তাওবা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। বিশেষত, এমন কিছু দোয়া ও আমল রয়েছে যা পালন করলে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার বহু বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব এমন একটি দোয়া সম্পর্কে, যা জুমার দিনে পাঠ করলে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়।

জুমার দিনের ফজিলত

জুমার দিন ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনকে ‘সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন’ বলা হয়। হাদিসে এসেছে:

“জুমার দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনে আদম (আঃ) সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়।”
সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭

এই দিন বিশেষ ইবাদতের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। জুমার খুতবা, নামাজ, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে এই দিনকে পূর্ণতা দেওয়া উচিত।

৮০ বছরের গুনাহ মাফের দোয়া

হাদিসে এসেছে,

“যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর না উঠে ৮০ বার নিম্নোক্ত দরুদ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং ৮০ বছরের নেকি তার আমলনামায় লেখা হবে।”
আল-জামি’ আস-সাগীর, হাদিস: ৫৭৭১

উক্ত দরুদটি হলো:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِهِ وَسَلِّمْ تَسْلِيمًا

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের নবী, উম্মী মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”

দোয়ার ফজিলত ও তাৎপর্য

এই দরুদ পাঠের মাধ্যমে:

  • ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়।

  • ৮০ বছরের নেকি আমলনামায় লেখা হয়।

  • আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ হয়।

  • নবী করিম (সা.)-এর শাফায়াতের অধিকারী হওয়া যায়।

দোয়া পাঠের সঠিক পদ্ধতি

এই দোয়া পাঠের জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা উচিত:

  1. আসরের নামাজের পর: দোয়াটি আসরের নামাজের পর পাঠ করতে হবে।

  2. অবস্থান: নামাজের পর উঠার আগে বসা অবস্থায় পাঠ করতে হবে।

  3. সংখ্যা: ৮০ বার দরুদটি পাঠ করতে হবে।

  4. মনোযোগ: পূর্ণ মনোযোগ ও খুশু-খুযু সহকারে পাঠ করা উচিত।

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল

জুমার দিন হলো ইবাদত, দোয়া ও ক্ষমা পাওয়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ। এসব আমল নিয়মিত করলে আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।

✅ ১. জুমার নামাজ আদায়

  • ফরজ নামাজ, গুরুত্বসহকারে আদায় করতে হবে। (সূরা জুমু’আহ: ৯)

✅ ২. গোসল করা

  • জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত ও ফজিলতপূর্ণ। (সহিহ বুখারি: ৮৭৭)

✅ ৩. পরিষ্কার পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার

  • পরিচ্ছন্নতা ও আতর ব্যবহার করা উত্তম।

✅ ৪. সূরা কাহফ তিলাওয়াত

  • জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়লে দুই জুমার মাঝে নূর পাওয়া যায়। (সহিহ মুসলিম: ৮৫৭)

✅ ৫. বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়া

  • রাসুল (সা.)-এর ওপর বেশি দরুদ পাঠ করা উত্তম আমল। (আবু দাউদ: ১৫৩১)

✅ ৬. আসরের পর ৮০ বার দরুদ

  • ৮০ বার পড়লে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়। (আল-জামি আস-সাগীর)

✅ ৭. দোয়া করা – বিশেষ সময়ে

  • আসরের পর থেকে মাগরিবের আগে দোয়া কবুলের সময়। (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)

✅ ৮. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

  • খুতবা চলাকালে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করতে হবে।

✅ ৯. আগে মসজিদে যাওয়া

  • যত আগে যাওয়া যায়, তত বেশি সওয়াব। (সহিহ বুখারি: ৯২৯)

✅ ১০. তাওবা, ইস্তেগফার ও জিকির

  • আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও তাঁর স্মরণ করা উচিত।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমল

জুমার দিনে আরও কিছু আমল রয়েছে, যা পালন করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়:

১. সূরা কাহফ পাঠ

হাদিসে এসেছে:

“যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে নূর প্রকাশ পাবে।”
সাহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭

২. বেশি বেশি দরুদ পাঠ

জুমার দিনে নবী করিম (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত।

“তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।”
সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১

৩. দোয়া কবুলের সময়

জুমার দিনে একটি বিশেষ সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়।

“জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, আল্লাহ তা কবুল করেন।”
সাহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫

উপসংহার

জুমার দিন মুসলিমদের জন্য এক বিশেষ দিন। এই দিনে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের অপার সুযোগ রয়েছে। উপরোক্ত দোয়া ও আমলগুলি পালন করে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং আমাদের গুনাহ মাফ করাতে পারি। আসুন, আমরা এই বরকতময় দিনে ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।