জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল কী?

জুমার দিন বা শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই মঞ্জুর হয়। তাই জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল সম্পর্কে জানা ও তা পালন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল, এর ফজিলত, গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও সুন্নত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

জুমার দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব

জুমার দিন ইসলামে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

“জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন এবং তা আদম (আ.)-এর কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১০৮৪)

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছু প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তা অবশ্যই দেন।” (বুখারী, হাদিস নং ৯৩৫)

এই দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা পালন করলে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও মাগফিরাত লাভ করা যায়।

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল

১. গোসল করা ও পবিত্রতা অর্জন

জুমার দিন গোসল করা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন:

“প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য জুমার দিন গোসল করা আবশ্যক।” (বুখারী, হাদিস নং ৮৭৯)

গোসলের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব।

২. উত্তম পোশাক পরিধান করা

জুমার দিনে সুন্দর ও পরিষ্কার পোশাক পরা সুন্নত। এই দিনে বিশেষভাবে সাদা পোশাক পরা উত্তম।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

জুমার নামাজের জন্য আগে থেকে মসজিদে যাওয়া এবং প্রথম সারিতে দাঁড়ানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে:

“যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসল করে প্রথম সময়ে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল। দ্বিতীয় সময়ে যে যায়, সে যেন একটি গরু কুরবানি করল। তৃতীয় সময়ে যে যায়, সে যেন একটি দুম্বা কুরবানি করল।” (বুখারী, হাদিস নং ৮৮১)

৪. জুমার খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

ইমাম যখন খুতবা দেন, তখন কথা বলা বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা নিষেধ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন:

“তুমি যদি খুতবার সময় তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলো, তাহলে তুমিও অনর্থক কথা বললে।” (বুখারী, হাদিস নং ৮৯৪)

৫. সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা

জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় নূর দ্বারা আলোকিত করা হবে।” (নাসাঈ, হাদিস নং ১০৭৩৭)

৬. বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা

জুমার দিনে দরুদ শরিফ পাঠ করলে রাসুল (সা.)-এর শাফায়াত লাভ করা যায়।

৭. দোয়া কবুলের বিশেষ সময়ে দোয়া করা

জুমার দিনে দোয়া কবুলের একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

“জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছু চাইলে, আল্লাহ তাকে তা দেন।” (বুখারী)

এই সময়টি আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত বলে অনেক আলেমের মত।

৮. বেশি বেশি ইস্তিগফার ও তাওবা করা

জুমার দিনে গুনাহ মাফের জন্য বেশি বেশি ইস্তিগফার ও তাওবা করা উচিত।

জুমার দিনের ১১ টি শ্রেষ্ঠ আমল

১. গোসল করা (ফরজে কিফায়া)

জুমার দিন গোসল করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য জুমার দিন গোসল করা উচিত।” (বুখারী, হাদিস নং ৮৭৯)

২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা

জুমার দিনে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি লাগানো মুস্তাহাব। এটি জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতির অংশ।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

যে ব্যক্তি প্রথম দিকে মসজিদে যায়, সে বেশি সওয়াব পায়। রাসুল (সা.) বলেছেন:

“জুমার দিন ফজরের পর যে যত দ্রুত মসজিদে যাবে, সে তত বেশি সওয়াব পাবে।” (বুখারী, হাদিস নং ৮৮১)

৪. সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা

জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করলে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় নূর দ্বারা আলোকিত হয়। (নাসাঈ, হাদিস নং ১০৭৩৭)

৫. বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা

জুমার দিনে দরুদ পাঠ করলে রাসুল (সা.)-এর শাফায়াত নসীব হয়।

৬. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

খুতবার সময় কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা নিষেধ। রাসুল (সা.) বলেছেন:

“খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলো, তাহলে তুমিও অনর্থক কাজ করলে।” (বুখারী, হাদিস নং ৮৯৪)

৭. দোয়া কবুলের সময়ে দোয়া করা

জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়। (বুখারী)

  • অনেকের মতে, এটি আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত।

৮. ইস্তিগফার ও তাওবা করা

জুমার দিনে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা উচিত।

৯. অসহায়দের সাহায্য করা

জুমার দিনে দান-সদকা করলে সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

১০. পরিবারের জন্য ভালো খাবার তৈরি করা

জুমার দিনে উত্তম খাবার তৈরি করা সুন্নত।

১১. নখ ও চুল কাটা (যদি প্রয়োজন হয়)

জুমার দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উত্তম।

জুমার দিনের বিশেষ দোয়া

জুমার দিনে এই দোয়াগুলো বেশি পড়া উচিত:

  • “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নিকা আলাল্লাহি ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, আন তাগফিরালি জুনুবি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।”

  • “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান নার।”

জুমার দিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত

  • জুমার দিনে নখ ও চুল কাটা

  • পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবার তৈরি করা

  • অসহায় ও গরিবদের সাহায্য করা

উপসংহার

জুমার দিন মুসলিমদের জন্য আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। এই দিনের আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করে আমরা আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারি।

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।