বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আর পাসপোর্ট করার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ সরকার চালু করেছে ই-পাসপোর্ট (Electronic Passport) — যা সম্পূর্ণ অনলাইনে আবেদন করা যায় এবং এটি আন্তর্জাতিক মানের একটি নিরাপদ ভ্রমণ নথি।
এই ই-পাসপোর্টে রয়েছে ইলেকট্রনিক চিপ, যা আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, স্বাক্ষর ইত্যাদি) সংরক্ষণ করে রাখে। এর ফলে নিরাপত্তা বাড়ে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আরও সহজ হয়।
অনেকে এখনো জানেন না, ঘরে বসে কিভাবে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে হয়, কোন ডকুমেন্ট দরকার, এবং কতদিনে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে দেখে নেব —
👉 কিভাবে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন,
👉 কীভাবে ফি পরিশোধ করবেন,
👉 এবং পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া কেমন।
আরও পড়ুন-১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
ধাপ ১: ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
সবার আগে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে —
🔗 https://www.epassport.gov.bd/
এখানে গিয়ে “Apply for e-Passport” অপশনটি ক্লিক করুন।
এরপর আপনার বর্তমান ঠিকানার উপর ভিত্তি করে পাসপোর্ট অফিস নির্বাচন করুন।
যেমন — আপনি ঢাকায় থাকলে “Dhaka Agargaon”, “Uttara”, বা “Jatrabari” ইত্যাদি অফিস বেছে নিতে পারেন।
ধাপ ২: অনলাইন ফর্ম পূরণ করা
এরপর আপনাকে একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে। ফর্মে সঠিক তথ্য দিতে হবে, যেমন —
-
নাম (বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়)
-
জন্ম তারিখ
-
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর
-
ঠিকানা (স্থায়ী ও বর্তমান)
-
পিতার ও মাতার নাম
-
মোবাইল নম্বর ও ইমেইল
-
পাসপোর্টের ধরন (Regular / Express / Super Express)
💡 বিশেষ টিপস:
সব তথ্য অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অনুযায়ী দিতে হবে।
একটি বানান ভুলও হলে পাসপোর্টে সমস্যা হতে পারে।
ধাপ ৩: পেমেন্ট (ফি পরিশোধ)
ই-পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন করার পর আপনাকে ফি পরিশোধ করতে হবে।
আপনি চাইলে অনলাইনে পেমেন্ট (ePayment) করতে পারেন অথবা ব্যাংকে গিয়ে ম্যানুয়ালি জমা দিতে পারেন।
ফি নির্ধারণ
| পাসপোর্ট ধরণ | পৃষ্ঠা সংখ্যা | মেয়াদ | ডেলিভারি টাইপ | ফি (টাকা) |
|---|---|---|---|---|
| সাধারণ | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | Regular | ৪,০২৫ টাকা |
| সাধারণ | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | Express | ৬,৯০০ টাকা |
| সাধারণ | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | Super Express | ৯,২০০ টাকা |
| সাধারণ | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | Regular | ৬,৩২৫ টাকা |
| সাধারণ | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | Express | ৮,০৫০ টাকা |
| সাধারণ | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | Super Express | ১২,৬৫০ টাকা |
💡 টিপস: অনলাইনে পেমেন্ট করলে তাৎক্ষণিক রিসিপ্ট পাবেন এবং আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
ধাপ ৪: অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা
পেমেন্টের পর আপনি একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখ নির্বাচন করতে পারবেন।
সেই তারিখে আপনাকে নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও স্বাক্ষর) দিতে।
আপনি চাইলে পরে লগইন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখ পরিবর্তনও করতে পারেন।
ধাপ ৫: পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করা
অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিনে নিচের ডকুমেন্টগুলো নিয়ে যান —
📄 অনলাইন আবেদন ফর্মের প্রিন্ট কপি
📄 পেমেন্ট রিসিপ্ট
📄 জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
📄 জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি NID না থাকে)
📄 পুরনো পাসপোর্ট (যদি থাকে)
সেখানে গিয়ে ছবি তোলা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও স্বাক্ষর সম্পন্ন করা হবে। সবকিছু শেষ হলে একটি Acknowledgement Slip পাবেন।
ধাপ ৬: পাসপোর্ট প্রসেসিং ও ডেলিভারি
এখন আপনার আবেদন যাচাই ও প্রিন্টিং প্রক্রিয়ায় যাবে।
সাধারণত সময় লাগে —
-
Regular: প্রায় ২১ কর্মদিবস,
-
Express: ৭–১০ কর্মদিবস,
-
Super Express: ২–৩ কর্মদিবস।
আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনি এসএমএস পাবেন এবং ওয়েবসাইটে লগইন করে “Track Application Status” অপশন থেকে আপনার পাসপোর্টের অগ্রগতি দেখতে পারবেন।
ধাপ ৭: পাসপোর্ট সংগ্রহ
এসএমএস পাওয়ার পর আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নিজের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
যদি কোনো কারণে আপনি নিজে না যেতে পারেন, তবে অনুমতিপত্রসহ আপনার প্রতিনিধি নিতে পারবেন।
পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর অবশ্যই প্রথমে চেক করুন —
-
নামের বানান সঠিক কিনা
-
জন্ম তারিখ ঠিক আছে কিনা
-
ছবিটি পরিষ্কারভাবে মুদ্রিত হয়েছে কিনা
যদি কোনো ভুল থাকে, সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।
৪৮ পৃষ্ঠা ও ৬৪ পৃষ্ঠার পার্থক্য
অনেকে প্রশ্ন করেন, ৪৮ পৃষ্ঠা আর ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের পার্থক্য কী?
মূলত, পার্থক্য শুধু পাতা সংখ্যা ও দাম-এর মধ্যে।
যারা বেশি ভ্রমণ করেন (বিশেষ করে ব্যবসায়ী, প্রবাসী), তারা ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট নেন যাতে বেশি ভিসা ও সিল রাখা যায়।
অন্যদিকে সাধারণ ভ্রমণকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠাই যথেষ্ট।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা
✅ আন্তর্জাতিক ভ্রমণে উচ্চ নিরাপত্তা
✅ সহজে ভিসা অনুমোদন
✅ অনলাইনে ট্র্যাকিং সুবিধা
✅ দ্রুত প্রসেসিং
✅ কোনো দালাল ছাড়া সরাসরি আবেদন করার সুযোগ
✅ ডিজিটাল রেকর্ডে নিরাপত্তা সংরক্ষণ
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: ই-পাসপোর্ট করতে কি পুরনো পাসপোর্ট প্রয়োজন?
👉 না, প্রথমবার আবেদন করলে পুরনো পাসপোর্ট লাগবে না।
প্রশ্ন ২: পাসপোর্টের মেয়াদ কতদিন?
👉 ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর বা ১০ বছর — আপনি আবেদন করার সময় যেটি বেছে নেবেন।
প্রশ্ন ৩: আমি বিদেশে আছি, সেখান থেকে আবেদন করতে পারব?
👉 হ্যাঁ, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও ই-পাসপোর্ট আবেদন করা যায়।
উপসংহার
ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে এখন পাসপোর্ট করতে আর দালালের পেছনে ঘুরতে হয় না।
ঘরে বসেই অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করা যায় এবং কয়েক দিনের মধ্যেই হাতে মেলে আন্তর্জাতিক মানের পাসপোর্ট।শুধু সঠিকভাবে তথ্য পূরণ, নির্ধারিত ডকুমেন্ট ও সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করলেই কাজ সম্পন্ন।
তাই যদি আপনি নতুন পাসপোর্ট করতে চান বা পুরনোটা নবায়ন করতে চান, তাহলে আজই প্রবেশ করুন —
👉 https://www.epassport.gov.bd/
এবং নিজের পাসপোর্ট আবেদন শুরু করুন এখনই! ✨
আরও পড়ুন-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?সর্বশেষ ফি কত?
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


