জন্ম নিবন্ধন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এটি শুধু একটি আইনি পরিচয়পত্র নয়, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, পাসপোর্ট সংগ্রহ, বিবাহ নিবন্ধনসহ নানা কাজে অপরিহার্য। আগে যেখানে জন্ম নিবন্ধন করতে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশনে যেতে হতো, এখন সেই প্রক্রিয়াটি সহজ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে করার সুযোগ চালু করেছে। আজকের পোস্টে আমরা দেখব কিভাবে ঘরে বসেই অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন-ভুয়া জন্ম নিবন্ধন চেনার উপায়
অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের জন্য যা যা লাগবে
জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার আগে কিছু কাগজপত্র ও তথ্য আপনার কাছে থাকতে হবে। যেমনঃ
-
সন্তানের জন্ম সনদ বা হাসপাতালের দেওয়া জন্মপ্রমাণপত্র।
-
মা ও বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)।
-
জন্মস্থান ও ঠিকানার তথ্য।
-
পাসপোর্ট সাইজ ছবি (যদি প্রয়োজন হয়)।
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম
বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন একটি অপরিহার্য আইনি নথি। এটি ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, স্কুল-কলেজে ভর্তি কিংবা সরকারি নানা সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন করার জন্য আর ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশনে ভিড় করতে হয় না। এখন ঘরে বসেই সহজে অনলাইনে আবেদন করা যায়। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলো—
ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে 👉 https://bdris.gov.bd।
ওয়েবসাইট ওপেন করলে “জন্ম নিবন্ধনের আবেদন” নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করুন।
ধাপ ২: নতুন আবেদন নির্বাচন করুন
“নতুন জন্ম নিবন্ধন” (Apply for Birth Registration) অপশনে ক্লিক করলে একটি অনলাইন ফরম ওপেন হবে। এই ফরমেই আপনাকে আপনার সন্তানের বা নিবন্ধন করতে চাওয়া ব্যক্তির তথ্য দিতে হবে।
ধাপ ৩: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করুন
এই ধাপে আপনাকে সন্তানের/ব্যক্তির নাম ও জন্মসংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। যেমনঃ
-
সন্তানের নাম (বাংলা ও ইংরেজিতে সঠিক বানান লিখতে হবে)
-
জন্ম তারিখ (দিন, মাস, সাল ঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে)
-
জন্মস্থান (হাসপাতাল/বাসা/ক্লিনিক ইত্যাদি উল্লেখ করুন)
-
লিঙ্গ (ছেলে/মেয়ে/অন্যান্য)
-
ধর্ম
👉 এখানে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে জন্মতারিখ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কিনা। কারণ পরবর্তীতে জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে চাইলে আলাদা জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
ধাপ ৪: পিতামাতার তথ্য দিন
এই ধাপে আপনাকে সন্তানের বাবা-মায়ের বিস্তারিত তথ্য পূরণ করতে হবে। যেমনঃ
-
পিতার নাম (বাংলা ও ইংরেজি)
-
মাতার নাম (বাংলা ও ইংরেজি)
-
উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর
-
পেশা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা (যদি থাকে)
👉 মনে রাখবেন, এখানে দেওয়া তথ্য অবশ্যই NID-এর সাথে মিলতে হবে। অন্যথায় আবেদন বাতিল হতে পারে।
ধাপ ৫: ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য
এরপর আপনাকে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে।
-
গ্রাম/মহল্লা
-
ডাকঘর
-
উপজেলা/থানা
-
জেলা
-
পোস্ট কোড
👉 ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ করলে ভবিষ্যতে কোনো ঝামেলা হবে না।
ধাপ ৬: প্রমাণপত্র সংযুক্ত করুন
আপনার আবেদনকে আরও নির্ভুল করতে কিছু কাগজপত্র স্ক্যান কপি হিসেবে আপলোড করতে হবে। সাধারণত যা যা লাগে—
-
জন্ম প্রমাণপত্র (হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে পাওয়া কাগজ)
-
পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি
-
প্রয়োজনে ছবি
👉 ফাইলগুলো অবশ্যই পরিষ্কার ও সঠিকভাবে স্ক্যান করা থাকতে হবে।
ধাপ ৭: তথ্য যাচাই করুন
সব তথ্য পূরণ হয়ে গেলে একবার ভালোভাবে যাচাই করে নিন। কারণ একবার সাবমিট করলে ভুল সংশোধন করতে সময় লাগবে।
ধাপ ৮: আবেদন সাবমিট করুন
সবকিছু সঠিকভাবে পূরণ করার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
এখন আপনার সামনে একটি ট্র্যাকিং নম্বর আসবে। এই নম্বর সংরক্ষণ করে রাখবেন। এটি দিয়ে আপনি আপনার আবেদন স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।
ধাপ ৯: আবেদন স্ট্যাটাস চেক করুন
আপনার আবেদন অনুমোদনের জন্য কিছুদিন সময় লাগবে।
-
ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইটে গিয়ে “আবেদনের অবস্থা” চেক করুন।
-
অনুমোদিত হলে আপনাকে নির্দিষ্ট তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন অফিস থেকে জন্ম নিবন্ধনের মূল কপি সংগ্রহ করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন যাচাই
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার পর তা অনুমোদিত হয়েছে কিনা সহজেই যাচাই করা যায়। এজন্য bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে “আবেদনের অবস্থা” অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ট্র্যাকিং নম্বর ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাবমিট করলে আবেদন অনুমোদনের বর্তমান অবস্থা দেখা যাবে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড PDF
অনেকে মনে করেন জন্ম নিবন্ধনের কপি সরাসরি অনলাইনে PDF আকারে ডাউনলোড করা যায়। তবে আসলে মূল জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা সম্ভব নয়। অনলাইনে শুধু জন্ম নিবন্ধনের তথ্য যাচাই ও আবেদন স্ট্যাটাস দেখা যায়। মূল কপি সংগ্রহ করতে হয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন অফিস থেকে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট
আবেদন ফরম পূরণের পর তা প্রিন্ট করে রাখা খুব জরুরি। আবেদন সাবমিট করার সময় সিস্টেম থেকে একটি কপি প্রিন্ট করার অপশন দেওয়া হয়। এটি প্রিন্ট করে রাখলে ভবিষ্যতে আবেদন ট্র্যাকিং কিংবা অফিস থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহের সময় কাজে লাগে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১: জন্ম নিবন্ধন কি সম্পূর্ণ অনলাইনে পাওয়া যায়?
👉 না, অনলাইনে শুধু আবেদন করা যায়। চূড়ান্ত সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন থেকে।
প্রশ্ন ২: কতদিনে জন্ম নিবন্ধন পাওয়া যায়?
👉 সাধারণত ৭–১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাওয়া যায়, তবে লোকেশনভেদে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
প্রশ্ন ৩: জন্ম নিবন্ধনের জন্য কি ফি দিতে হয়?
👉 জন্ম থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে কোনো ফি নেই। তবে এর পর নিবন্ধন করতে হলে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।
প্রশ্ন ৪: অনলাইনে আবেদন করার পর তথ্য ভুল হলে কী করতে হবে?
👉 ভুল হলে সংশোধনের জন্য আবার আবেদন করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর অফিসে আবেদন জমা দিতে হবে।
উপসংহার
ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যুগে জন্ম নিবন্ধন করা এখন অনেক সহজ। ঘরে বসেই আপনি সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কেবল প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে অফিস থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। মনে রাখবেন, জন্ম নিবন্ধন শুধু একটি কাগজ নয়, এটি নাগরিক জীবনের মৌলিক পরিচয়পত্র। তাই দেরি না করে আজই অনলাইনে আবেদন করে নিন।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-জন্ম নিবন্ধন বাংলা থেকে ইংরেজি করার নিয়ম
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔