ঘুমানোর দোয়া আরবি এবং বাংলাতে উচ্চারণ সহ অর্থ

ঘুম মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে ঘুমানোর আগে কিছু বিশেষ দোয়া ও আমল করার কথা বলা হয়েছে, যা আমাদের নিরাপত্তা, শান্তি ও আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ঘুমানোর দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ, এর গুরুত্ব, এবং এর পিছনে থাকা ইসলামিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করব।

ঘুমানোর দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ সহ

ঘুমানোর আগে পড়ার জন্য ইসলামে বেশ কিছু দোয়া ও আমল রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দোয়াটি হলো:

আরবি:
بِاسْمِكَ رَبِّـي وَضَعْـتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُـهُ، فَإِنْ أَمْسَـكْتَ نَفْسِـي فَارْحَـمْها، وَإِنْ أَرْسَلْتَـها فَاحْفَظْـها بِمـا تَحْفَـظُ بِهِ عِبـادَكَ الصّـالِحِـينَ.

বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিকা রব্বি ওয়াদাতু জানবি, ওয়া বিয়াকা আরফাউহু, ফাইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সলিহিন।

অর্থ:
হে আমার রব! তোমার নামেই আমি আমার পাশ ফিরাই এবং তোমার নামেই আমি তা উঠাই। যদি তুমি আমার প্রাণ হেফাজত কর, তবে তাকে রহম কর। আর যদি তুমি তা ফিরিয়ে দাও, তবে তাকে তোমার নেক বান্দাদের হেফাজতের মাধ্যমে হেফাজত কর।

এই দোয়াটি ঘুমানোর আগে পড়লে আল্লাহর রহমত ও হেফাজত লাভ করা যায়। এটি আমাদেরকে নিরাপত্তা ও শান্তির অনুভূতি দেয়।

ঘুমানোর দোয়ার গুরুত্ব

ইসলামে ঘুমানোর দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি শুধু একটি প্রার্থনা নয়, বরং এটি আমাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একটি মাধ্যম। নিম্নে ঘুমানোর দোয়ার কিছু গুরুত্ব তুলে ধরা হলো:

  1. আল্লাহর রহমত লাভ: এই দোয়া পড়লে আল্লাহর রহমত ও হেফাজত লাভ করা যায়।
  2. নিরাপত্তা: ঘুমের সময় শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে এই দোয়া পড়া হয়।
  3. শান্তি লাভ: এই দোয়া পড়লে মানসিক শান্তি ও প্রশান্তি লাভ করা যায়।
  4. ইবাদতের সওয়াব: ঘুমানোর আগে দোয়া পড়া একটি ইবাদত, যা সওয়াবের কাজ।

ঘুমানোর আগে অন্যান্য আমল

ঘুমানোর আগে শুধু দোয়া পড়াই নয়, আরও কিছু আমল রয়েছে যা করা উচিত। যেমন:

  1. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়া: এই তিনটি সুরা পড়লে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  2. ডান কাত হয়ে ঘুমানো: এটি সুন্নত অনুযায়ী ঘুমানোর পদ্ধতি।
  3. বিছানা পরিষ্কার করা: ঘুমানোর আগে বিছানা পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
  4. মিসওয়াক করা: ঘুমানোর আগে মিসওয়াক করা সুন্নত।

ঘুমানোর দোয়ার ফজিলত

ঘুমানোর দোয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। এটি পড়লে আল্লাহর রহমত ও হেফাজত লাভ করা যায়। নিম্নে এর কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো:

আরও –তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত বাংলায় উচ্চারণ সহ

  1. শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা: এই দোয়া পড়লে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  2. নিরাপত্তা লাভ: ঘুমের সময় আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়।
  3. শান্তি লাভ: এই দোয়া পড়লে মানসিক শান্তি ও প্রশান্তি লাভ করা যায়।
  4. ইবাদতের সওয়াব: ঘুমানোর আগে দোয়া পড়া একটি ইবাদত, যা সওয়াবের কাজ।

ঘুমানোর দোয়া সম্পর্কে হাদিস

ঘুমানোর দোয়া সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। নিম্নে এর কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো:

  1. হাদিস ১:
    আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ঘুমানোর আগে এই দোয়া পড়তেন:
    “বিসমিকা আল্লাহুমma আমুতু ওয়া আহিয়া।”
    অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি মৃত্যুবরণ করি এবং তোমার নামেই আমি জীবিত হই।
  2. হাদিস ২:
    আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, “যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে, তখন ডান কাত হয়ে এই দোয়া পড়বে:
    ‘বিসমিকা রব্বি ওয়াদাতু জানবি, ওয়া বিয়াকা আরফাউহু, ফাইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সলিহিন।'”

রাতে ঘুম না আসলে কি দোয়া পড়তে হবে?

রাতে ঘুম না আসলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কিছু দোয়া শিখিয়েছেন, যা পড়লে ইনশাআল্লাহ ঘুম সহজ হবে।

اللهم غَارَتِ النُّجُومُ، وَهَدَأَتِ الْعُيُونُ، وَأَنْتَ حَيٌّ قَيُّومٌ، لَا تَأْخُذُكَ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، أَهْدِئْ لَيْلِي، وَأَنِمْ عَيْنِي

উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা গারাতিন নুজুম, ওয়া হাদা’তিল উয়ূন, ওয়ানতা হাইয়ুন কাইয়ূম, লা তা’খুঝুকা সিনাতুন ওয়ালা নাওম, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ূম, আহদি লাইলি ওয়া আনিম আইনি।”

অর্থ:
“হে আল্লাহ! তারা (নক্ষত্র) ডুবে গেছে, চোখগুলো শান্ত হয়ে গেছে, অথচ আপনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আপনাকে কখনো তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। হে চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, আমার রাতকে শান্ত করুন এবং আমার চোখকে ঘুম দান করুন।”

রাতে কি কি সূরা পড়তে হয়?

রাতে ঘুমানোর আগে কিছু নির্দিষ্ট সূরা পড়া সুন্নত, যা আমাদের নিরাপত্তা, মানসিক প্রশান্তি ও বরকত আনতে সাহায্য করে। হাদিস অনুযায়ী, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে ঘুমানোর আগে কিছু বিশেষ সূরা পড়তে বলেছেন।

আয়াতুল কুরসি (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
সূরা আল-মুলক (৬৭)
সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস (তিনবার করে)
সূরা আল-কাফিরুন
সূরা আল-বাকারা’র শেষ দুই আয়াত
সূরা আদ-দুখান (সুযোগ থাকলে)

তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দোয়া

তাড়াতাড়ি ও শান্তিময় ঘুমের জন্য নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। ঘুমানোর আগে এগুলো পড়লে ইনশাআল্লাহ দ্রুত ঘুম আসবে এবং ভালো ঘুম হবে।

اللهم باسمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।”

অর্থ:
“হে আল্লাহ! আপনার নামের বরকতে আমি মৃত্যুবরণ করি (ঘুমাই) এবং পুনরুজ্জীবিত হই (জাগি)।”
(সহিহ বুখারি: ৬৩২৪, সহিহ মুসলিম: ২৭১১)

ছোট বাচ্চাদের ঘুমানোর দোয়া

ছোট বাচ্চাদের ঘুমানোর আগে সহজ ও সংক্ষিপ্ত দোয়া শেখানো সুন্নত এবং এটি তাদের জন্য বরকতময়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া দেওয়া হলো, যা শিশুরা সহজেই মুখস্থ করতে পারবে:

🔹 اللهم باسمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।”

অর্থ:
“হে আল্লাহ! আপনার নামের বরকতে আমি ঘুমাই এবং জেগে উঠি।”

শান্তিতে ঘুমানোর দোয়া

শান্তিতে ও নিরাপদে ঘুমানোর জন্য নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু দোয়া শিখিয়েছেন।

🔹 اللهم باسمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।”

অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে (শান্তিতে) ঘুমাই এবং আপনার ইচ্ছায় জেগে উঠি।”

ঘুম থেকে উঠার দোয়া বাংলায়

🔹 الحمدُ للهِ الذي أحيانا بعد ما أماتنا وإليه النشور

উচ্চারণ:
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।”

অর্থ:
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর (ঘুম) পর আবার জীবিত করেছেন, এবং তাঁর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।”

ঘুমানোর দোয়া সম্পর্কে প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: ঘুমানোর দোয়া কেন পড়া উচিত?
উত্তর: ঘুমানোর দোয়া পড়লে আল্লাহর রহমত ও হেফাজত লাভ করা যায়। এটি শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে এবং মানসিক শান্তি দেয়।

প্রশ্ন ২: ঘুমানোর দোয়া কখন পড়তে হয়?
উত্তর: ঘুমানোর আগে বিছানায় শোয়ার সময় এই দোয়া পড়তে হয়।

প্রশ্ন ৩: ঘুমানোর দোয়া ছাড়া আর কী আমল করা উচিত?
উত্তর: ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়া, ডান কাত হয়ে ঘুমানো, এবং বিছানা পরিষ্কার করা উচিত।

প্রশ্ন ৪: ঘুমানোর দোয়ার ফজিলত কী?
উত্তর: ঘুমানোর দোয়া পড়লে আল্লাহর রহমত ও হেফাজত লাভ করা যায়, শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, এবং মানসিক শান্তি লাভ করা যায়।

উপসংহার

ঘুমানোর দোয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি আমাদেরকে আল্লাহর রহমত ও হেফাজত লাভের মাধ্যম। এই দোয়া পড়লে আমরা শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাই এবং মানসিক শান্তি লাভ করি। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এই দোয়া পড়া এবং অন্যান্য সুন্নত আমলগুলো পালন করা।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari. I am a salaried employee by profession and the admin of this website. Apart from my job, I have been writing on my own website for the past 14 years and creating content on my own YouTube and Facebook. Special Note - If there is any mistake in the writing, please forgive me. Thank you.